আপনার শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হার্ট। কিন্তু জানেন কি, প্রতিদিন বাংলাদেশে গড়ে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন হার্ট অ্যাটাকে, যার একটি বড় অংশের মূল কারণ হল হার্ট ব্লকেজ? এই ব্লকেজ বা রক্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই ঘটে থাকে, যা এটিকে আরও ভয়ংকর করে তোলে। আপনি যদি হঠাৎ বুকে চাপ অনুভব করেন, হালকা হাঁপানির মতো কষ্ট হয়, কিংবা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন- তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কারণ আজ আমরা জানব হার্ট ব্লক কি, কীভাবে এটি কাজ করে, এবং কীভাবে বিভিন্ন হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ আমাদের শরীরের ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। এই আর্টিকেলে এমন কিছু তথ্য পাবেন যা জানলে আপনি অবাক হবেন- বিশেষ করে যদি আপনি বা আপনার পরিবারে কারও হার্ট সমস্যার ইতিহাস থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১.৮ কোটি মানুষ মারা যান হৃদরোগে, যার মধ্যে প্রায় ৮৫% মৃত্যুর কারণ হলো হার্ট ব্লক বা হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের বাধা। এটি শুধু বয়স্কদের সমস্যা নয়- আজকাল তরুণদের মধ্যেও ৩০ বছরের নিচে হার্ট অ্যাটাক একটি ভয়াবহ বাস্তবতা হয়ে উঠছে। অথচ বেশিরভাগ মানুষ জানেই না হার্ট ব্লক কি বা কীভাবে এর লক্ষণ চিনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এই আর্টিকেলে আমরা হার্ট ব্লকেজের প্রাথমিক কারণ, লক্ষণ এবং বিভিন্ন প্রকার যেমন – First-degree block, Second-degree block, Third-degree block সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধরণের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো। যারা হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতন হতে চান বা তাদের প্রিয়জনকে সুস্থ রাখতে চান, তাদের জন্য এই লেখা হতে পারে একটি জীবন রক্ষাকারী গাইডলাইন।
হার্ট ব্লকেজ মানে কী?
হার্ট ব্লকেজ বলতে বোঝায় হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো (Coronary Arteries) আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্লক হয়ে যাওয়া- অর্থাৎ রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়া। এই ধমনীগুলো হৃদপিণ্ডের পেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। যখন কোনো কারণে এই ধমনীতে চর্বি, কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ জমে, তখন ধমনীটি সরু হয়ে যায়- এবং একসময় এই জমাট প্লাক ফেটে গিয়ে পুরো রক্তনালী বন্ধ করে দিতে পারে। তখন হার্টে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। ব্লক যত বড়, হৃদপিণ্ডের ক্ষতির আশঙ্কা তত বেশি।
অনেক সময় এই ব্লকেজ দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে বাড়ে এবং শরীর কিছুটা মানিয়ে নেয় বলে শুরুতে তেমন লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু একসময় যখন রক্ত প্রবাহ হঠাৎ কমে যায়, তখন বুকে চাপ অনুভব, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, বা হাঁটলে বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। যদি কোনো ব্লকেজ ৭০% বা তার বেশি হয়, তখন সেটিকে “সিগনিফিক্যান্ট ব্লক” ধরা হয় এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হয়- যেমন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, স্টেন্ট বসানো বা বাইপাস সার্জারি। তাই হার্ট ব্লক কোনো হঠাৎ সমস্যা নয়- বরং এটি একটানা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফল, যা সময়মতো ধরা না পড়লে প্রাণঘাতী হতে পারে।
হার্ট ব্লক আর হার্ট অ্যাটাক কি একই জিনিস?
না, হার্ট ব্লক আর হার্ট অ্যাটাক এক জিনিস নয়- এগুলো দুটো আলাদা শারীরিক অবস্থা, যদিও দুটিই হৃদযন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং জীবনঘাতী হতে পারে। নিচে পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করছি-

হার্ট ব্লক হলো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সিস্টেমে গোলযোগ, যার কারণে হার্টবিট ধীর হয়ে যায় বা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। হার্ট ঠিকভাবে সংকোচন ও সম্প্রসারণ করতে পারে না, ফলে রক্ত সঠিকভাবে পাম্প হয় না। এই সমস্যা বৈদ্যুতিক সংকেত সঠিকভাবে হার্টের চেম্বারগুলোয় পৌঁছাতে না পারার কারণে হয়। এর ফলে রোগী মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বুক ধড়ফড়, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন। হার্ট ব্লক সাধারণত ইলেকট্রিক্যাল কন্ডাকশন সিস্টেমে সমস্যা হওয়ায় হয়, এবং এটি হার্ট অ্যাটাকের মতো তৎক্ষণাৎ রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ঘটনা নয়। হার্ট ব্লকের চিকিৎসায় পেসমেকার বসানো হয় অনেক সময়, যা বৈদ্যুতিক সংকেত ঠিক রাখে।
অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক হয় তখন, যখন হৃদপিণ্ডের কোনো একটি বা একাধিক রক্তনালী (coronary artery) হঠাৎ করে আংশিক বা পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায়, ফলে হার্টের কোনো অংশে রক্ত পৌঁছায় না। এতে ওই অংশের হার্ট মাসল অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে। এটি একটি জরুরি মেডিকেল কন্ডিশন এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে জীবন হারানোর আশঙ্কা থাকে।
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত করোনারি আর্টারিতে জমে থাকা প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয়, যার ফলে ব্লকেজ সৃষ্টি হয়। এতে বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন সেই সব মানুষ, যাদের জীবনযাত্রায় বা শারীরিক অবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, এবং ধূমপান বা তামাক সেবনের অভ্যাস- এই সবই হার্টে ব্লকেজ সৃষ্টি করে। এছাড়া যাঁদের পরিবারে আগে থেকেই হার্টের রোগের ইতিহাস আছে, বিশেষ করে পিতা বা মাতা যদি অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, এবং শারীরিক ব্যায়ামের অভাবও এই ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে। সম্প্রতি দেখা গেছে, ৩০–৪৫ বছর বয়সী তরুণরাও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, জাঙ্ক ফুড, রাত জাগা, এবং স্ট্রেসফুল লাইফস্টাইলের কারণে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। এমনকি নারীরাও এখন আর নিরাপদ নন- বিশেষ করে যাঁরা গর্ভধারণকালীন ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগেছেন, অথবা মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে এসেছেন, তাঁদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের হার বাড়ছে।
কোনো উপসর্গ ছাড়াও কি হতে পারে হার্ট ব্লক? বুঝবো কিভাবে?
হ্যাঁ, অনেক সময় হার্ট ব্লক একেবারে কোনো উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরে গড়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে প্রাথমিক বা ফার্স্ট-ডিগ্রি হার্ট ব্লক হলে। এটি তখনই বেশি ঘটে, যখন শরীর নিজেই সাময়িকভাবে বৈদ্যুতিক সংকেতের গতি কমে যাওয়াকে সহ্য করে নিতে পারে। এই ধরণের ব্লক ধরা না পড়লে মানুষ বছরের পর বছর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে, অথচ হার্টে ভিতরে ভিতরে সমস্যা জমা হতে থাকে। তবে যখন এটি সেকেন্ড বা থার্ড ডিগ্রি ব্লকে রূপ নেয়, তখন উপসর্গ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়- কিন্তু কখনো কখনো এত হালকা হয় যে তা রোগী বা তার পরিবার বুঝতেই পারে না। অনেকেই শুধু দুর্বলতা, অলসতা বা ঘন ঘন ক্লান্তিকে সাধারণ ভাবেন, কিন্তু এগুলো হতে পারে একটি নীরব হার্ট ব্লকের ইঙ্গিত।
যদিও কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ খুবই ক্ষীণ, তবু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত থাকে যা সতর্ক হওয়ার জন্য জানা দরকার। যেমন- ঘন ঘন মাথা ঘোরা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (fainting), বুক ধড়ফড় করা, ধীরে চলা বা অনিয়মিত হার্টবিট, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা হাঁটলেই নিঃশ্বাসের কষ্ট- এইসবই হার্ট ব্লকের সম্ভাব্য লক্ষণ। বিশেষ করে যদি কোনো মানুষ আগে সুস্থ ছিলেন, হঠাৎ করে এমন অনুভব করতে থাকেন, তবে অবহেলা না করে দ্রুত ECG বা Holter Monitor পরীক্ষা করানো উচিত। অনেক সময় রাতে ঘুমানোর সময়ও হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেত ধীর হয়ে যায়- এবং তা রোগীর অজান্তেই শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে প্রভাবিত করতে থাকে। তাই বয়স ৪০ পেরোলেই, বা পরিবারে হার্ট ডিজিজের ইতিহাস থাকলে, নিয়মিত হার্ট চেকআপ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- even যদি কোনো লক্ষণ না থাকে তবুও।
হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ: কোনটি বেশি বিপজ্জনক?
First-degree Heart Block: সবচেয়ে হালকা ধরণ
First-degree heart block হলো হার্ট ব্লকের সবচেয়ে মৃদু বা প্রাথমিক স্তর। এতে হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেত ঠিকভাবেই সমস্ত চেম্বারে পৌঁছে যায়, তবে তা পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় নেয়। এই ধরণের ব্লক সাধারণত কোনো উপসর্গ তৈরি করে না, এবং অনেক মানুষ সারা জীবন এই অবস্থায় থেকে যান কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। এটি সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বা কিছু ওষুধের প্রভাবে হয়ে থাকে, যেমন- বেটা-ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা ডিজিটালিস।
এই ধরণের ব্লক ECG (ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম) ছাড়া সাধারণত ধরা পড়ে না। তবে এটি তখনই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, যখন এটি ধীরে ধীরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডিগ্রি ব্লকে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে। তাই যাদের মধ্যে এই ধরণের ব্লক ধরা পড়ে, বিশেষ করে বয়স বেশি বা অন্য হার্ট-রোগের ইতিহাস আছে, তাঁদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ফলো-আপ জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ চালু বা বন্ধ করা একেবারেই উচিত নয়।
Second-degree Heart Block (Type 1 & Type 2): মধ্যম স্তরের বিপদ
Second-degree heart block এমন একটি অবস্থা যেখানে কিছু বৈদ্যুতিক সংকেত হার্টের অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকলে পৌঁছায় না- ফলে কিছু হার্টবিট বাদ পড়ে যায়। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: Type 1 (Mobitz I বা Wenckebach) এবং Type 2 (Mobitz II)। Type 1 সাধারণত কম বিপজ্জনক এবং অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াও থাকতে পারে। এতে ধীরে ধীরে PR interval বেড়ে গিয়ে একটি বিট বাদ পড়ে, তারপর আবার চক্র শুরু হয়। অনেক অ্যাথলেট বা সুস্থ ব্যক্তির মধ্যেও এটি ধরা পড়ে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু Type 2 বেশি বিপজ্জনক। এতে আকস্মিকভাবে এক বা একাধিক হার্টবিট বাদ পড়ে, কিন্তু কোনো পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই। এটি হার্টের ভেন্ট্রিকল পর্যায়ে সংকেত পাঠানো ব্যর্থ হলে ঘটে, যার ফলে হৃদস্পন্দন আচমকাই ধীর হয়ে যেতে পারে। এই ধরণের ব্লকে রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন বা মারাত্মক ব্র্যাডিকার্ডিয়ায় (অতিরিক্ত ধীর হার্টবিট) ভুগতে পারেন। Mobitz II ধরা পড়লে অনেক সময় পেসমেকার বসানো জরুরি হয়ে পড়ে।
Third-degree (Complete) Heart Block: সবচেয়ে বিপজ্জনক
Third-degree বা Complete Heart Block হলো হার্ট ব্লকের সবচেয়ে গুরুতর রূপ। এই অবস্থায় অ্যাট্রিয়া (উপরের চেম্বার) এবং ভেন্ট্রিকল (নিচের চেম্বার) একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সংযোগ হারায়, যার ফলে হার্টের স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত একেবারেই নিচে পৌঁছায় না। এতে হার্ট একটি “বিকল্প” সিস্টেমে খুবই ধীর গতিতে স্পন্দিত হতে থাকে (প্রায় ৩০-৪০ বিট/মিনিট), যা শরীরের প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহে যথেষ্ট নয়। এই ধরণের ব্লকে রোগী মাথা ঘোরা, তীব্র ক্লান্তি, বুক ধড়ফড়, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মুখোমুখি হতে পারেন।

এই অবস্থায় তৎক্ষণিক চিকিৎসা ছাড়া রোগীর জীবনসংহার আশঙ্কা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Third-degree ব্লকের জন্য স্থায়ী পেসমেকার ইমপ্ল্যান্টেশন প্রয়োজন হয়, যাতে হৃদপিণ্ডে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠানো হয় এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখা যায়। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়, তবে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে। তাই কোনো রোগী যদি বারবার অজ্ঞান হয়ে যান বা হার্টবিট খুব ধীর হয়ে আসে, তাকে অবিলম্বে ইলেকট্রোফিজিওলজিস্ট বা কার্ডিওলজিস্টের কাছে নিতে হবে।
Electrical vs Structural ব্লকেজের পার্থক্য: কোথায় ফারাক?
Electrical block হলো হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেত সিস্টেমের গোলযোগ, যার ফলে হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না। এতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে, হার্টবিট অনিয়মিত হয় এবং রোগীর মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি সাধারণত হার্টের ভিতরের বৈদ্যুতিক কন্ডাকশন সিস্টেমের কোনো অংশে সমস্যা হলে হয়- যেমন SA node, AV node, বা His-Purkinje সিস্টেম। Electrical block পেসমেকার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অন্যদিকে, Structural block বা Coronary blockage বোঝায় হার্টের ধমনীগুলোতে চর্বি বা প্লাক জমে রক্ত চলাচলের পথ আটকে যাওয়া। এটি হচ্ছে সেই ব্লক যেখানে হৃদপিণ্ডের পেশিতে অক্সিজেন ও রক্ত পৌঁছায় না, ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। Structural block অনেক সময় বিনা উপসর্গে থেকেও হঠাৎ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর চিকিৎসা ভিন্ন- যেমন স্টেন্ট বসানো, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি। সংক্ষেপে বললে, Electrical block হল বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সমস্যা, আর Structural block হল রক্তনালীর বাধা- দুটিই বিপজ্জনক, তবে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী।
উপসংহার
শেষ কথা হলো, হার্ট ব্লকেজ কোনো হঠাৎ আসা রোগ নয়- বরং এটি ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া এক নীরব ঘাতক। তাই “হার্ট ব্লক কি” এবং এর “প্রকারভেদ” সম্পর্কে সচেতনতা থাকা মানে, নিজের জীবনকে আরও নিরাপদ করে তোলা। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, সঠিক ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইজ এবং স্ট্রেস কমানো- এই ছোট ছোট পদক্ষেপ আপনাকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন, একটি ব্লকেজ হতে পারে একটি জীবন শেষ হওয়ার কারণ। তাই নিজেকে এবং প্রিয়জনদের রক্ষা করতে হলে এখনই সচেতন হোন, তথ্য জানুন এবং অন্যদেরও জানাতে সাহায্য করুন। এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে আরও মানুষকে হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করুন।